ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায়

আপনার ফেসবুক আইডি কে টাকা ইনকামের উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় সম্পর্কে জানা জরুরি। আজকের আলোচনায় সে বিষয়ে জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১২টি উপায়

ফেসবুক থেকে খুব সহজেই টাকা আয় করার ১০টি উপায় জেনে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে দ্রুত মূল আলোচনায় চলে যান। 

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় 

বর্তমানে ফেসবুক আইডি যারা ব্যবহার করছে তারা বিভিন্নভাবে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে যেমন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার এবং মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে কিন্তু আগের থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক থেকে আয় আগের থেকে অনেক কঠিন হয়ে গেছে। 

উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে বর্তমান সময়ে একটি পেজের কোন একটি অর্গানিক পোস্ট সাধারণত মোট ফলোয়ারের প্রায় ৫ শতাংশ রিচ করে অথচ ২০১৮ সালে সেটা ছিল ৭ শতাংশ। এমনকি যারা বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপের জন্য অর্থ ব্যয় করেন তাদের ক্ষেত্রেও সময়ের সাথে সাথে রিচ আরও কমে যায়।

আরও পড়ুনঃ




এরপরও এর একটা ভালো দিক হল, ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম নতুন উদ্যোক্তা এবং বিপুল সংখ্যক ফলোয়ারদের জন্য আয় করার জন্য নতুন এবং আরও উন্নত কিছু সুযোগ তৈরি করেছে। এখন নিচে আলোচনা করব ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায়,  

১. ফেসবুক পেজ মনিটাইজেশন

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় এর মধ্যে প্রথম উপায় হছে ফেসবুক পেজ মনিটাইজেশন করে আয়। আপনার পেইজ মনিটাইজেশনের জন্য যোগ্য কিনা তা দেখার জন্য আপনি প্রথমে যাবেন 
ক্রিয়েটর স্টুডিওর মনিটাইজেশন ট্যাবে। যদি থাকে তাহলে কিছু সর্ত মানতে হবে যেমন, 
  • ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড নীতিমালা মেনে চলতে হবে যেমন, কোনো ধরনের নিষিদ্ধ বা অশ্লীল বিষয়বস্তু আপলোড করা যাবে না।     
  • পার্টনার মনিটাইজেশন পলিসি মানতে হবে। এক্ষেত্রে কনটেন্টের উৎস ঠিক থাকতে হবে এবং অর্থ লেনদেনের নিয়ম মানতে হবে। 
  • কনটেন্ট মনিটাইজেশন পলিসি মানতে হবে মানে হিংস্র, মিথ্যা বা অনিরাপদ কিছু পোস্ট করা যাবে না।
উপরোক্ত নিয়ম যদি মানা না হয় তাহলে মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্রিয়েটর স্টুডিওর মনিটাইজেশন ট্যাবে এর কারণ এবং সমাধানের পথ জানতে পারবেন। 

২. ফেসবুকে রিলস ভিডিও বানিয়ে আয়

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় এর মধ্যে দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে ফেসবুকে রিলস ভিডিও বানিয়ে আয় করা। একিখানে শুধু বিনোদনই থাকেনা ের সাথে ভালো একটা আয় থাকে। এই রিলস মনিটাইজেশন করে রিলস ভিডিও নির্মাতারা সরাসরি ভিডিও কনটেন্ট থেকে আয় করতে পারবেন। রিলস বানিয়ে আয় করতে গেলে কিছু নিয়ম মানতে হবে যা নিচে উল্লেখ করা হল, 
  • রিলস মনিটাইজেশন প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে কিছু মানদণ্ড মেনে চলতে হবে যেমন, আপনার পেইজে খুব ভালো সংখ্যক ফলোয়ার থাকতে হবে এবং ভিডিও কনটেন্টে দর্শকের উপস্থিতি থাকতে হবে খুব সক্রিয়। 
  • ভিডিও বানানর ক্ষেত্রে ফেসবুকের কনটেন্ট মনিটাইজেশন পলিসি মানতে হবে যেমন, কোনো ধরণের উস্কানিমূলক, অশালীন বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট বানান থেকে সাবধান থাকতে হবে নয়ত মনিটাইজেশন সুবিধা পাওয়া যাবে না।
  • ফেসবুক রিলসে আপনি ইন-স্ট্রিম অ্যাড ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার রিলসে ভিডিওর শেষে বা মাঝে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। দর্শকরা যখন এই বিজ্ঞাপন দেখবে তখন এর থেকে আপনি একটা আয় করতে পারবেন। 
  • নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিউ পেলে ফেসবুক আপনাকে রিলস প্লে বোনাস সুবিধা দিবে। এই অফার মাঝে মাঝে চালু কর। এটা মূলত নির্মাতাদের উৎসাহিত করার জন্য দেওয়া হয়। 
  • এছাড়াও আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে পার্টনারশিপ করতে পারেন। আপনি কোন ব্র্যান্ডের পণ্য আপনার রিলস ভিডিওতে প্রচার করে একটা কমিশন অর্জন করতে পারেন কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার একটা শক্তিশালী ফলোয়ার বেস থাকতে হবে। 

৩. ইন-স্ট্রিম অ্যাড থেকে ইনকাম 

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় এর মধ্যে তৃতীয় উপায় হচ্ছে ইন-স্ট্রিম অ্যাড থেকে ইনকাম। ফেসবুক ইন-স্ট্রিম অ্যাড থেকে আয় করতে চাইলে কয়েকটি শর্ত মানতে হয়:
  • আপনার ব্যবহৃত ফেসবুক পেজে যেখান থেকে আপনি ভিডিও উপ্লয়াদ করবেন সেই পেইজে কমপক্ষে ১০,০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে।
  • গত দুইমাসে অর্থাৎ ৬০ দিনে আপনার ভিডিওর (ওয়াচটাইম) হতে হবে  ৬ লাখ মিনিট। 
  • মানসম্মত ভিডিও থাকতে হবে অন্তত ৫ টি এবং প্রতিটি ভিডি হতে হবে ৩ মিনিট বা তার বেশি। 
  • কোনো নিষিদ্ধ বিষয় বা নিয়ম ভাঙা কনটেন্টর ভিডিও থাকা যাবেনা। 
  • ইন-স্ট্রিম অ্যাডে তিন ধরনের বিজ্ঞাপন হয় যেমন, প্রি-রোল, মিড-রোল এবং ইমেজ অ্যাড।
  • ইন-স্ট্রিম অ্যাড চালু করতে আপনাকে Creator Studio-তে গিয়ে ‘Monetization’ ট্যাবে ক্লিক করতে হবে।দর্শকরা যখন আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখে তাতে ক্লিক করবে তখন আপনার আয় হবে। 
  • নিয়মিত ভিডিও দিতে হবে আর জনপ্রিয় ভিডিও দিতে হবে তাহলে আয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি হবে। 

৪. স্পন্সরশিপ এবং ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ 

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় এর চতুর্থ উপায় হচ্ছে স্পন্সরশিপ এবং ব্র্যান্ড পার্টনারশিপের মাধ্যমে আয়। এটি একটি খুব জনপ্রিয় এবং লাভজনক পদ্ধতি। এই উপায়ে আয় করতে গেলে সর্বপ্রথম সর্ত হচ্ছে একটি সক্রিয় ফলোয়ার বেস তৈরি করতে হবে।

সেই সাথে নিয়মিত মানসম্মত ভিডিও, পোস্ট বা স্টোরি তৈরি করতে হবে তাহলে বিভিন্ন ব্র্যান্ড আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী হবে। আপনি ব্র্যান্ডের পণ্য প্রচারের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন। বিভিন্নভাবে এই প্রচার হতে পারে যেমন, ভিডিও রিভিউ, স্টোরি, প্রোমোশনাল পোস্ট বা লাইভ সেশনের মাধ্যমে। 

সাধারণত ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ দীর্ঘমেয়াদি হয় যার ফলে এর থেকে আয়  ধারাবাহিক হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে কনটেন্টে স্পন্সর বা ব্র্যান্ডের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ও মনিটাইজেশন নীতিমালা মেনে চলতে হবে। 

৫. পেজে পেইড সাবস্ক্রিপশন যোগ

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় এর মধ্যে অন্যতম আরেকটি উপায় হচ্ছে পেজে পেইড সাবস্ক্রিপশন যোগ করা। আপনার ফেসবুক পেইজে পেইড সাবস্ক্রিপশন যুক্ত করার অর্থ হল আপনার যারা ফলোয়ার আছে তারা মাসে একটা নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে আপনার একটা এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট উপভোগ করতে পারবেন। 

এই সুবিধা তারায় নিতে পারবেন যাদের পেজে কমপক্ষে ১০,০০০ ফলোয়ার আছে এবং যারা ফেসবুকের নিয়ম কানুন মেনে চলে। সাবস্ক্রিপশন চালু হলে আপনি আপনি ভিডিও, লাইভ, স্টোরি বা প্রাইভেট গ্রুপের মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ কনটেন্ট দিতে সক্ষম হবেন। 

ফলোয়াররা যদি চাই মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে এই বিশেষ কনটেন্ট উপভগ করতে পারবেন। এইভাবে আপনি ফেইসবুক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ইনকাম করতে পারবেন। আবার যদি আপনি সাবস্ক্রাইবারদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেন তাহলে তারা দীর্ঘদিন ধরে আপনার সাথে থাকবে। 
 
মাঝে মাঝে যদি বিশেষ অফার বা ডিসকাউন্ট দেওয়া হয় তাহলে সাবস্ক্রিপশন আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। যারা কনটেন্ট নির্মাতা তাদের আয় করার জন্য এটি সহজ এবং জনপ্রিয় উপায়। ফেসবুকের এই ফিচারটির নাম "Fan Subscriptions"। এটি ক্রিয়েটর স্টুডিও থেকে চালু করা যায় কিন্তু ফলোয়ারদেরকে আগের থেকেই জানিয়ে রাখতে হবে। 

৬. ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রি 

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় এর মধ্যে ৬ নম্বর উপায় হচ্ছে ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রি করে আয়। বর্তমান সময়ে ফেসবুক একটি শক্তিশালী মার্কেটপ্লেস। এখানে আপনি বিভিন্ন  ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট যেমন ঐতিহ্যবাহী খাবার, হস্তনির্মিত কারুশিল্প, পুরানো ব্যবহৃত জিনিসপত্র বা স্থানীয় অন্যান্য পণ্য খুব সহজেই বিক্রি করতে পারবেন। 

এই প্ল্যাটফর্ম আপনার স্থানীয় প্রোডাক্টগুলিকে একটি বড় বাজারে পরিচিতি করার একটা বিশাল সুযোগ করে দেয়। এক্ষেত্রে আপনার লাভ যেটা হবে সেটা হল আপনি নিজের পণ্য প্রচার করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে লাভবান হতে পারবেন।

এর আরেকটি ভাল দিক হল আপনি গ্রামীণ কিছু অচেনা প্রোডাক্ট কে সহবার সামনে পরিচিতি করিয়ে দিতে পারবেন। আপনি আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য ফেসবুকে লাইভ করে ভিডিও করে পণ্যের পরিচিতি করতে পারবেন। 

৭. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং 

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি উপায় এর মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি চমৎকার উপায়। এখানে আপনি বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মে আপনি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এ অংশ নিয়ে বড় ব্র্যান্ড বা কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন করে দিতে পারবেন। 

আপনি  যখন কোনো অনলাইন কোম্পানির অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিবেন তাদের পণ্য প্রচার করার জন্য তখন তারা তারা আপনাকে একটি বিশেষ লিংক দিবে এবং সেই লিঙ্ক দিয়ে আপনি পণ্য কিনলে আপনি কমিশন আয় করতে পারবেন।  

এরপর আপনি আপনি আপনার ফেসবুক পেজে অ্যাফিলিয়েট লিংকটা শেয়ার করবেন। যদি কেও ওই লিংকে ক্লিক করে পণ্য কিনে তাহলে আপনি একটা কমিশন পাবেন। এই প্রক্রিয়ায় আপনি মানুষকে পণ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছেন এবং বিনিময়ে আপনি কমিশন পাচ্ছেন। 

৮. অনলাইনে পেইড ইভেন্ট 

আপনি আরেকটি কাজ করতে পারেন ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে একটা অনলাইন ইভেন্ট আয়োজন করতে পারেন। এই ইভেন্ট আয়োজন করতে আপনাকে পেইড ইভেন্ট ফিচার চালু করতে হবে এবং টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।  

এই ইভেন্টে যারা আগ্রহী তারা টাকা দিয়ে এই ইভেন্টে অংশ নিতে পারবে এবং এইভাবে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে এই ফিচারটি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই মনিটাইজেশন শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।

একবার যদি আপনি অনুমোদন পান তাহলে আপনি নিয়মিত ইভেন্ট আয়োজন করে আপনার আয় বাড়াতে পারবেন এবং আপনার পেজের জনপ্রিয়তাও বাড়বে।

৯. ফেসবুক গ্রুপ মার্কেটিং 

আপনি যদি কোনো একটা বিষয়ে ভালো জানেন বা ভালো পারেন যেমন রান্না, ফিটনেস, ডিজিটাল মার্কেটিং বা পড়ানো তাহলে সেই বিষয় নিয়ে আগে ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলে ফেলুন। তারপর সেখানে আপনি আপনার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন যাতে সেটা অন্যদের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।   

তারপর এই গ্রুপে নিয়মিত ভালো মানের কন্টেন্ট দিন যেমন টিপস, ভিডিও, কোর্স বা ছোট ছোট ওয়েবিনার, দেখবেন ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকবে। যত বেশি মানুষ গ্রুপে যোগ দেবে, ততই আপনি বিজ্ঞাপন বা স্পনসরশিপের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ পাবেন। 

আপনাকে আপনার গ্রুপের সদস্যদের উপকার করতে হবে তাহলে দেখবেন তারা গ্রুপে নিয়মিত আসবে এবং থেকে যাবে। এরপর আপনি ধীরে ধীরে সেই গ্রুপ থেকেই আয় করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা, এটা শুধু টাকা আয়ের পথ না এটা একটা নিজের কমিউনিটি তৈরি করারও একটা সুযোগ।  

১০. ফলোয়ারদের আপনার অনলাইন স্টোরে নিয়ে যান

আপনি যদি ক্রেতাদের আপনার ফেসবুক পেইজে নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনি আপনার ফেসবুক পেইজের ‘ক্যাটালগ ম্যানেজারে’ পণ্যের লিস্ট যোগ করুন। এরপর আপনি পোস্ট, ভিডিও বা লাইভের মাধ্যমে সেই পণ্যের লিংক অ্যাড করে দিন। এক্ষেত্রে ক্রেতা যদি চায় সরাসরি সেই লিংক থেকে সরাসরি পণ্য কিনতে পারবে। 

এমনকি আপনি যদি ডিজিটাল পণ্য বিক্রি, অনলাইন সার্ভিস দেওয়া বা একদম নতুন ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আরও বড় ব্যবসায়ী হতে পারবেন কারণ মাসে প্রায় ২৯০ কোটির মতো মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। 

ফেসবুক থেকে ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট পেয়ে আয় বাড়ানোর টিপস

ফেসবুক থেকে ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট পেয়ে আয় বাড়ানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল রয়েছে, যেগুলি আপনি অনুসরণ করতে পারেন। ফেসবুকের বিশাল ব্যবহারকারী সংখ্যা এবং সক্রিয় কমিউনিটি আপনাকে সহজেই আপনার দক্ষতা প্রদর্শন করতে এবং নতুন ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে। নিচে কিছু কার্যকরী টিপস দেওয়া হলো:

ফেসবুক পেজ তৈরি করুন

প্রথমেই একটি পেশাদার ফেসবুক পেজ তৈরি করুন, যেখানে আপনি আপনার কাজ, প্রকল্প এবং দক্ষতা প্রদর্শন করবেন। আপনার পেজে আপনার পূর্ববর্তী কাজের উদাহরণ, পোর্টফোলিও এবং ক্লায়েন্টদের রিভিউ শেয়ার করুন। এটি আপনার পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলবে এবং ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করবে।

ফেসবুক গ্রুপে অংশগ্রহণ করুন

ফেসবুকে অনেক ফ্রিল্যান্সিং বা নির্দিষ্ট কাজের গ্রুপ রয়েছে যেখানে চাকরির সুযোগ, প্রজেক্টের অফার এবং বিভিন্ন কাজের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আপনি এই গ্রুপগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন এবং আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। এটি আপনাকে প্রাসঙ্গিক কাজের প্রস্তাবনা পেতে সাহায্য করবে।

নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন

ফেসবুকে নিয়মিতভাবে আপনার দক্ষতা এবং কাজের প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট শেয়ার করুন। যদি আপনি গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা অন্য কোনো দক্ষতায় পারদর্শী হন, তাহলে তার সম্পর্কে পোস্ট করুন, টিউটোরিয়াল শেয়ার করুন অথবা আপনার কাজের উদাহরণ দিন। এটি আপনার প্রোফাইলের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে এবং আপনাকে নতুন কাজের প্রস্তাব দেবে।

পেইড অ্যাড ব্যবহার করুন

ফেসবুকে পেইড অ্যাড চালানোর মাধ্যমে আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সিং সেবা প্রমোট করতে পারেন। ফেসবুকের বিজ্ঞাপন সিস্টেম আপনাকে লক্ষ্যযুক্ত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়। আপনি নিজের কাজের পেইজে পেইড অ্যাড চালিয়ে আপনার সেবা এবং দক্ষতা নিয়ে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন।

প্রোফাইল অপটিমাইজ করুন

আপনার ফেসবুক প্রোফাইলকে পেশাদারীভাবে সাজান। এতে আপনার কাজের ক্ষেত্র এবং অভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। ফেসবুক প্রোফাইলের "About" সেকশনে আপনার কাজ এবং স্কিলের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিন। এটি ক্লায়েন্টদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হবে এবং তাদেরকে আপনার সেবা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে।

ক্লায়েন্টদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখুন

ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ক্লায়েন্টদের সাথে সহজে যোগাযোগ রাখতে পারবেন। কাজের প্রক্রিয়া বা নতুন প্রজেক্ট সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দিন এবং তাদের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দ্রুত দিন। ভালো যোগাযোগ বজায় রাখা আপনাকে আরও কাজ পেতে সহায়তা করবে।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের সাথে ইন্টিগ্রেশন

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেমন Upwork, Fiverr বা Freelancer.com ব্যবহার করে থাকেন, তবে আপনার ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর লিঙ্ক শেয়ার করা একটি কার্যকরী কৌশল হতে পারে। এতে আপনার ফেসবুক অনুসারীরা আপনার পেশাদারি সেবা সম্পর্কে জানতে পারবে, এবং এর মাধ্যমে আপনি অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকেও কাজের সুযোগ পেতে পারেন। এতে আপনার প্রোফাইলের উপস্থিতি বাড়বে এবং নতুন নতুন কাজের সুযোগও তৈরি হবে।

বিশ্বস্ত ক্লায়েন্টদের রেফারেন্স সংগ্রহ করুন

ফেসবুকে আপনার পূর্ববর্তী ক্লায়েন্টদের রিভিউ এবং প্রশংসাপত্র শেয়ার করুন। এটি আপনার কাজের মানের প্রমাণ এবং ভবিষ্যৎ ক্লায়েন্টদের আস্থা অর্জনে সাহায্য করবে। আপনার পেজে বা প্রোফাইলে "Reviews" সেকশনটি আপডেট রাখুন যাতে অন্যরা আপনার কাজের ভালো মান দেখতে পায়।

বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্ট দিন

ফেসবুকে আপনার সেবা অফার করতে বিশেষ ডিসকাউন্ট বা প্রচারণা চালান। নতুন ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করার জন্য বিশেষ অফার বা প্যাকেজ তৈরি করতে পারেন, যেমন প্রথম প্রজেক্টে ২০% ডিসকাউন্ট বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার গ্যারান্টি।

নেটওয়ার্কিং এবং সম্পর্ক তৈরি করুন

ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে অংশগ্রহণ করে আপনি নতুন সুযোগের সন্ধান পেতে পারেন এবং একে অপরের সাথে সহযোগিতা করে কাজ পেতে পারেন। নেটওয়ার্কিং দীর্ঘমেয়াদী আয় বাড়াতে সাহায্য করে।

কন্টেন্ট মার্কেটিং করুন

ফেসবুকে কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজ এবং দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন। ব্লগ পোস্ট, ইন্সপিরেশনাল কোট বা আপনার কাজের ধরণ শেয়ার করে আপনি আপনার দর্শকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।

লাইভ সেশন এবং Q&A

ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার স্কিল এবং দক্ষতা সম্পর্কে সরাসরি দর্শকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। লাইভ সেশনে আপনি প্রশ্নোত্তর (Q&A) আয়োজন করতে পারেন, যেখানে আপনার ক্লায়েন্টরা তাদের চাহিদা এবং সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। এটি আপনাকে আরও বেশি ক্লায়েন্ট এবং প্রকল্প পেতে সহায়তা করবে।

এভাবে, আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট পেয়ে আয় বাড়াতে পারেন। ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১২টি উপায় শেখার মাধ্যমে আপনি আরও দক্ষভাবে এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে পারবেন এবং আপনার আয়ের পথ সুগম করতে পারবেন।

লেখকের মন্তব্য

ফেসবুক থেকে টাকা আয় করে একজন ব্যক্তি নিজের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা দিয়ে সফলভাবে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, সঠিক কৌশল এবং টার্গেটেড মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় বাড়ানো সম্ভব। ফলে, ফেসবুকের মাধ্যমে এক ব্যক্তি সাবলম্বি হতে পারেন এবং একটি স্থায়ী আয়স্রোত তৈরি করতে সক্ষম হন। পোস্টটি আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করে পাশে থাকুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url