২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা
ইনকাম ট্যাক্স প্রতিটি চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ীর জন্য একটি আতংকের নাম। একটি গণতান্ত্রিক দেশে ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া প্রতিটি সামর্থবান চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ীর চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাই চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা।
ভূমিকা
বাংলাদেশ আমাদের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার কিছু দায়িত্ব আছে আর সেসব দায়িত্বের মধ্যে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আয়কর দেওয়া। আমরা অনেকেই চাকরি করি, কেউবা ব্যবসা করি। যাদের আয় আছে এবং যারা সক্ষম, তাদের জন্য আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
কারণ আমরা যে রাস্তা দিয়ে চলি, যে হাসপাতাল বা স্কুলে যাই, বা সরকার যেসব সেবামূলক কাজ করে সবই এই আয়কর থেকেই চলে। এক কথায়, দেশের উন্নয়নের পেছনে আমাদের দেওয়া টাকাই কাজ করে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখনো অনেক মানুষ কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কেউ কেউ ভাবেন, আয়কর দিলে নাকি নিজেরই ক্ষতি হয় কিন্তু আসলে তা নয়। বরং, যখন কেউ আয়কর দেয় না, তখন শুধু তিনি নন পুরো দেশই এক ধাপ পিছিয়ে পড়ে। উন্নয়নের চাকায় যেন একটা ব্রেক পড়ে যায় আর এটা মাথায় রাখা দরকার, কর না দিলে শুধু দেশের ক্ষতি হয় না, আইনগত ভাবেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কর ফাঁকি দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তাই আয়কর দেওয়া শুধু একটা বাধ্যবাধকতা না এটা আমাদের দায়িত্ব, আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর একটা উপায়। এই কাজটা করলে একদিকে যেমন দেশের উন্নয়নে অংশ নেওয়া হয়, অন্যদিকে নিজের নাগরিক দায়িত্বও ঠিকভাবে পালন করা হয়।
চলুন, আয়কর নিয়ে ভয় না পেয়ে বরং বুঝে নিই কীভাবে আয়কর দেওয়া যায়, কখন দিতে হয়, আর না দিলে কী হতে পারে। জেনে রাখা আর দায়িত্ব পালন করা দুটোই আমাদের দেশের জন্য ভালো, নিজের জন্যও ভালো। আমরা সবাই মিলে যদি একটু সচেতন হই, তাহলে একদিন নিশ্চয়ই আমাদের প্রিয় দেশটা আরও সুন্দর, আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
ইনকাম ট্যাক্স কি
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা সম্পর্কে জানার আগে জেনে নেই ইনকাম ট্যাক্স কি। আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স আসলে খুব সহজ একটা বিষয়। এটা একধরনের সরাসরি কর, মানে আপনি যেটুকু আয় করেন, তার একটা অংশ সরাসরি সরকারকে দিতে হয়।
ধরুন, আপনি চাকরি করেন বা ব্যবসা করেন আপনার যে আয় হচ্ছে, তার মধ্যে যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট অংশ কর হিসেবে দিতে হবে। এটা সরকার ঠিক করে দেয়।
এই টাকাটা কিন্তু কোথাও হারিয়ে যায় না। বরং, আপনি যে রাস্তা দিয়ে যান, যে হাসপাতাল বা স্কুলে যান, কিংবা যে ব্রিজ বা ভবনগুলো তৈরি হয়, এসবের পেছনে এই করের টাকাই খরচ হয়। অর্থাৎ, আপনি যে করটা দিচ্ছেন, সেটা ঘুরে-ফিরে দেশের কাজে লাগছে, আর সেই সাথে আপনারও উপকার হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো
আয়কর শুধু চাকরির বেতন থেকেই দিতে হয় না। যদি আপনার ব্যবসা থাকে, যদি বাড়ি বা জমি ভাড়া দিয়ে আয় করেন, কিংবা শেয়ার বিক্রি করে লাভ পান এসব জায়গা থেকেও আয় হলে তার উপরও কর দিতে হয়।
সোজা করে বললে, যাদের আয় নির্দিষ্ট একটা সীমার ওপরে, তাদের আয়কর দেওয়ার নিয়ম। আর এই কর দেওয়া শুধু একটা বাধ্যবাধকতা নয়, এটা একটা সম্মানের ব্যাপারও। ভাবুন তো, আপনি নিজের দেশের উন্নয়নে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন এর চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে?
তাই কর দেওয়া থেকে পালিয়ে না গিয়ে বরং গর্ব নিয়ে বলুন, “হ্যাঁ, আমি আয়কর দিই, আমি দেশের একজন দায়িত্ববান নাগরিক।”
আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫অনুযায়ী ট্যাক্স রেট কিভাবে নির্ধারণ হয়
প্রত্যেক দেশের মতো বাংলাদেশেও আয় অনুযায়ী ট্যাক্স রেট বা করের হার নির্ধারণ করা হয়। কার কত আয়, তার উপর ভিত্তি করেই ট্যাক্স দিতে হয়। যাদের আয় কম, তারা কম ট্যাক্স দেয়, আর যাদের আয় বেশি, তাদের দিতে হয় একটু বেশি এটাই মূলত প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা।
বাংলাদেশে আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার একটা নির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে। প্রতিটি করদাতাকে বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে নিজের আয়ের হিসাব জমা দিতে হয় যেটাকে বলা হয় "ট্যাক্স রিটার্ন" দাখিল করা। এর মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় কে কত কর দেবেন। এই টাকা দিয়েই সরকার দেশের উন্নয়নমূলক কাজগুলো চালিয়ে যায়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ইনকাম ট্যাক্স যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা নিয়ে একটু পরেই বিস্তারিত বলছি। আপনি যদি চাকরি করেন, ব্যবসা করেন বা অন্য কোনোভাবে আয় করেন, তাহলে এই নিয়মগুলো আপনার জানাটা খুবই জরুরি।
ব্যক্তিগত আয়কর রেট(২০২৪-২০২৫ অর্থবছর)
বেসিক কর রেটঃ
- ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত
- ৪,০০,০০১ থেকে ৬,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ ১০%
- ৬,০০,০০১ থেকে ১২,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ ১৫%
- ১২,০০,০০১ থেকে ৩০,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ ২০%
- ৩০,০০,০০০ টাকার উপরেঃ ২৫%
নারী ও প্রবীণ নাগরিক(৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে)
৪,৫০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত
মুক্তিযোদ্ধা
৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত
আয়কর নির্ধারণ হয় বেতন, ব্যবসা বা পেশা থেকে অর্জিত আয়, সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়, মুলধনী লাভ এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় ( উদাহরণঃ লভ্যাংশ, সুদ)
আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন
- সাধারণ ব্যক্তি
- হিন্দু অবিভক্ত পরিবার
- অসংযুক্ত পরিবার
- কোম্পানি
- অন্যান্য প্রতিষ্ঠান
রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময়
কিভাবে জমা দেবেন?
যেসব কাগজপত্র লাগবে
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- বিনিয়োগের কাগজপত্র (যদি থাকে)
- বড় কেনাকাটার রসিদ (যেমন জমি বা গাড়ি)
ফর্ম পূরণ
কর ছাড় (Tax rebate)
- জীবন বিমায় ইনভেস্ট করলে
- স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম দিলে
- সন্তানের পড়াশোনার খরচ দেখালে
- নির্দিষ্ট কিছু সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখলে
চাকরিজীবীদের জন্য
কর জমা দেওয়ার উপায়
- টাকা জমা দিতে পারবেন
- অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে
- অথবা সরাসরি ট্যাক্স অফিসে গিয়ে
সব জমা দেওয়ার পর কী হবে?
আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫বা জরিমানা
রিটার্ন দাখিল না করলে কী হয়?
আয়কর অডিট হতে পারে
কর ফাঁকি দিলে কী হয়?
কর অব্যাহতি সনদ (Tax Clearance Certificate) না পেলে সমস্যা
ব্যবসায়িক ক্ষতির ঝুঁকি
- ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে
- ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন আটকে যেতে পারে
- বড় কোনো লেনদেন করতে গেলেও সমস্যা হতে পারে
আইনগত ব্যবস্থা
ফৌজদারি শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে
লেখকের মন্তব্য
বাংলাদেশে ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর ব্যবস্থাটা অনেক পুরনো, মানে অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। তবে এক সময় এই পুরো প্রক্রিয়াটা একটু কঠিন আর ঝামেলাপূর্ণ ছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে আয়কর ব্যবস্থাও আধুনিক হয়েছে।
এখন তো ডিজিটাল যুগ! জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) স্বাধীনতার পর থেকে এই খাতটিকে উন্নত করার জন্য অনেক কাজ করছে। বিশেষ করে ই-ফাইলিং, অনলাইন রিটার্ন জমা, এসব আসার পর অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে আমাদের জন্য।
তবে একটা বিষয় ঠিক সবকিছুর পরেও কর ফাঁকি আর সব আয়কর ঠিকমতো আদায় করা এখনো একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। দেশের উন্নয়নের জন্য সবারই উচিত নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করা, করটা ঠিকঠাক দেওয়া।
আপনি যদি এই পোস্টটা উপকারী মনে করেন, তাহলে বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, খোলামনে কমেন্ট করুন যতটুকু পারি সাহায্য করার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url