বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় এর ইতিহাস এবং মোকাবেলায় করনীয়সমূহ- রেমাল
ভূমিকা
ঘূর্ণিঝড় কি
ঘূর্ণিঝড় হল বাতাসের প্রচণ্ড ঘূর্ণায়মান গতির ফলে সৃষ্ট গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় বা বায়ুমণ্ডলীয় একটি উত্তাল অবস্থা। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয়। ঘূর্ণিঝড় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, শক্তিশালী বাতাস এবং জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে। অন্যভাবে একে বলা যায় যে, উষ্ণ সাগরের উপর উৎপন্ন এবং নিম্নচাপ কেন্দ্রের চারপাশে ঘূর্ণায়মান বাতাসের সৃষ্ট একটি শক্তিশালী ঝড় হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ বা তার বেশি কিলোমিটার হতে পারে।
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস
প্রকৃতি নিজের ভারসাম্য রক্ষার্থে সময়ে সময়ে এরকম বিরূপ আচরণ করে থাকে। প্রতিবছর পৃথিবীতে ৮০টির মত ঘূর্ণিঝড় হলেও প্রায় ঘূর্ণিঝড়গুলো সমুদ্রে মিলিয়ে যায় কিন্তু যেগুলো উপকূলবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানে সেগুলোর ভয়াবহতা একটু বেশি। এরকম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলেও আঘাত হেনেছিল ইতিহাস সাক্ষী। ঘূর্ণিঝড়কে আমরা সাইক্লোন নামেও চিনি। বাংলাদেশে ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে নিচে দেওয়া হল,
আরও পড়ুনঃ ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প এবং এর তীব্রতা
১৮৭৬ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৮৭৬ সালে ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড় যা ‘দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ ১৮৭৬’ নামেও পরিচিত। এটি ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচিত। এটি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলার বাকেরগঞ্জ জেলা যা বর্তমানে বরিশালে আঘাত হানে।
এর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার বা ১৩৭ মাইল। ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয় এবং প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায় এবং অনেক সম্পদহানি ঘটে।
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়গুলোর একটি আঘাত হানে যার নাম ভোলার ঘূর্ণিঝড় বা ভোলা সাইক্লোন নামে পরিচিত। এর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বা ১১৫ মাইল। সিম্পসন স্কেলে এটি ‘ক্যাটাগরি ৩’ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ হয়।
এই সময় ২০ থেকে ৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয় এবং উপকূল এলাকা প্লাবিত করে। আনুমানিক সাড়ে তিন লাখ মানুষ মারা যায় এবং লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে এর সাথে অবকাঠামো ধ্বংস হয়।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি ইতিহাসের একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এটি "১৯৯১ চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড়" নামে পরিচিত। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল ছিল এবং এটি ক্যাটাগরি ৫ সুপার সাইক্লোন ছিল। এ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ২০ থেকে ২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয় এবং ১,৩৮,০০০ মানুষ প্রাণ হারায় আর ১ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে "ঘূর্ণিঝড় সিডর"। এটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক যা ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি ঘটায়। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার বা ১০ মাইল ছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ১০ থেকে ২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয় যা উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক প্লাবন ঘটায়।
এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৩,৪৪৭ জন মানুষ প্রাণ হারায় এবং হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়। ৯০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে এবং ফসল, ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। এই সময় বাংলাদেশে ধান নষ্ট হয়ে যায় প্রায় প্রায় ৬ লাখ টন। হাঁস-মুরগিসহ প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার গৃহপালিত পশু মারা যায়।
২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড়
২০০৯ সালের ২৫ মে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি "ঘূর্ণিঝড় আইলা" নামে পরিচিত। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বা ৭৫ থেকে ৯৩ মাইল। এই ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হয়েছিল একই সালের ২১ মে ভারতের কলকাতা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এটি ক্যাটাগরি ১ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত হয়। এর ফলে ১০ থেকে ১৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়, এক্সস উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্লাবন ঘটায়।
এতে আনুমানিক ১৯০ জন প্রাণ হারায় এবং ৭ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এর সাথে ১০ হাজারেরও বেশি গবাদি পশু মারা যায় এবং প্রায় ৩ লাখ একর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১৩ সালের ঘূর্ণিঝড়
২০১৩ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে "ঘূর্ণিঝড় মহাসেন"। এটি ২০১৩ সালের ১৬ মে আঘাত হানে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা ৬২ মাইল ছিল এবং ক্যাটাগরি ১ ঘূর্ণিঝড় ছিল। এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের কাছাকাছি। এই সময় ৩ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়।
১৭ জন মানুষ প্রাণ হারায় এবং বহু মানুষ আহত হয়। অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মত এই ঘূর্ণিঝড়েও ফসল, ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১৭ সালের ঘূর্ণিঝড়
২০১৭ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় "মোরা" নামে পরিচিত। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৭ কিলোমিটার বা ৭৩ মাইল। এটি ক্যাটাগরি ১ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত হয়। এর ফলে ২ থেকে ২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়, এক্সস উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্লাবন ঘটায়।
২০১৯ সালে আঘাত হানা প্রধান ঘূর্ণিঝড়টি ছিল "ঘূর্ণিঝড় বুলবুল"। এটি ৯ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার উপকূলে প্রথম আঘাত হানে। তারপর এটি স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তবে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। এই একই বছরে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল সেটার নাম ছিল "ফণী"।
এর বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০ কিমি/ঘণ্টা এবং ভারী বর্ষণ হয়েছিল। এ ঘূর্ণিঝড়ে ১৭ জন মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ৬৩,০০০ হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়েছিল। অন্যদিকে বুলবুলের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। মানুষ নিহত হয় ২৫ জন এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। দেশের মোট কৃষি জমির ১৪% ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড়
২০২০ সালে ২০মে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় আম্পান ছিল এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা দেশের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার যা প্রবল বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ এবং ৫,০০,০০০ মানুষ ঘরবাড়ি হারায়। প্রায় ৩,৫০,০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১৭৬,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ও মাছের খামার ধ্বংস হয়।
২০২২ সালের ঘূর্ণিঝড়
২০২২ সালে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ঘূর্ণিঝড়টি ২৪ অক্টোবর আঘাত হানে এবং এটি ছিল বেশ শক্তিশালী। প্রায় ৩৫ জন এই ঘূর্ণিঝড়ে নিহত হয় এবং ২০০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। কৃষিক্ষেত্রে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন টাকার ক্ষতি হয়।
২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড়
২০২৩ সালে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানে। মে মাসে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ১৪ মে ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে যার ফলে প্রবল বৃষ্টি ও তীব্র বাতাসের সৃষ্টি হয়।
বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ছিল ১৭৫ মাইল। প্রায় ৩,৩৪,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভূমিধ্বস আর ঘরবাড়ি ধ্বংসের ঘটনা ঘটে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কক্সবাজারে ৩৩টি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল সম্পর্কে বর্ণনা
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় এর ইতিহাস এর মধ্যে সাম্প্রতিক ২০২৪ সালের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ২৫ মে গভীর নিম্নচাপ থেকে শুরু হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং ২৬মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে।
ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রীয় বেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার থেকে ১৩০ কিলোমিটার। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলবর্তী এলাকা যেমন সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে তীব্র ঝড় হয় এবং জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয় এবং ভারী বর্ষণের কারনে নদী ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
এছাড়াও বরিশাল বিভাগে এই ঘূর্ণিঝড়ের কারনে ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং অনেক জায়গায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে প্রায় ৪০০০ সাইক্লোন শেলটার প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং ৮০,০০০ স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছিল। এই ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থানেই আঘাত হানে।
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় করনীয়সমূহ
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ বন্যা, খরা, ভূমিধ্বস, টর্নেডো, শৈত্যপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ ও প্রাণহানির ক্ষতি করে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস তাই আমাদের এ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে বা ক্ষতির পরিমাণ কমাতে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী করণীয়সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হল,
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বের করণীয়সমূহ
- দুর্যোগের সম্ভাব্য ক্ষতির অঞ্চলসমূহের মানুষদের এবং গবাদিপশুদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
- যেখানে যেখানে বাধ আছে যেমন বাড়ির সামনে বা গ্রামের রাস্তায় গাছ লাগানো।
- উঁচু জায়গায় ঘর বানাতে হবে এবং শক্ত ভিত্তির উপর। সেক্ষেত্রে লোহার বা কাঠের পিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের ছাদের ক্ষেত্রে টিন ব্যবহার না করায় ভাল কারন ঘূর্ণিঝড়ে টিন খুব সহজেই উড়ে যায়।
- জলোচ্ছ্বাসের সময় লোনা ও ময়লা পানি টিউবওয়েল এ ঢুকে যায় তাই চেষ্টা করতে হবে উঁচু জায়গায় টিউবওয়েল স্থাপন করা।
- দিনের সবসময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলারে উঠার সময় সঙ্গে রেডিও রাখুন।
- বেসিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সবসময় বাসায় রাখুন।
- জলোচ্ছ্বাসের কারনে আমাদের কৃষি জমির অনেক ক্ষতি সাধিত হয় তাই পূর্ব থেকেই শস্যের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে নিতে হবে।
- ভবিষ্যতে জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এখন থেকেই নারকেল, কলাগাছ, বাঁশ, তাল, কড়ই ও অন্যান্য শক্ত গাছপালা লাগিয়ে রাখতে হবে কারন এসব গাছ ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের বেগ অনেকটা কমিয়ে দেয়।
- ঘরের ভেতর একটা পাকা গর্ত করে রাখতে পারেন যাতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় গর্তে প্রয়োজনীয় জিনিস লুকিয়ে রাখতে পারেন।
- প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার যেমন মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট ইত্যাদি বাসায় মজুদ রাখুন।
- ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী বৃষ্টি হয় এ পানি ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস পাওয়ার পর করণীয়সমূহ
- আপনার ঘরের অবস্থা ভালভাবে পরীক্ষা করুন যেন শক্ত অবস্থানের উপর দাঁড়িয়ে আছে কিনা।
- সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে খোঁজখবর রাখবেন এবং তাদের পরামর্শ পুরোপুরি মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
- পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে বাড়ির সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পোঁছে দিন।
- ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ববর্তী যে গর্তটি করবেন তাতে প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন শুকনো কাঠ, পানি ফিটকিরি, চিনি, ডাল, চাল, দেশলাই,নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পুতে রাখুন।
- এ সময় রেডিওতে বেশি বেশি ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনুন।
- দলিলপত্র ও টাকা পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিয়ে নিজের সঙ্গে রাখুন।
- টিউবওয়েল এর মুখ খুব ভালভাবে পলিথিন দিয়ে মুরে রাখুন যাতে লোনা বা ময়লা পানি প্রবেশ না করে।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরবর্তী করনীয়
- এই সময় অনেক গাছ রাস্তার উপর ভেঙ্গে পড়ে থাকে। আমাদের দায়িত্ব থাকবে সেগুলো সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে ফেলা যাতে স্বেচ্ছাসেবক দল দ্রুত পৌছাতে পারে।
- আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষদের নিজ নিজ বাসায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করুন এবং যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেসে তাদের মাথা গোজার ঠাই করে দিন।
- উদ্ধার কর্মীদের সাথে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্র বা অন্যকোন যায়গার মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সাহায্য করুন।
- এ সময় জনসাধারণ জেনো এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থাকে। যতটা পারা যায় নিজেরা একে অন্যকে সাহায্য করুন।
- ঝড় একটু কম মনে হলেও বাসা থেকে বের হবেন না। অন্য দিক থেকে আবারও প্রচণ্ড গতিতে ঝড় আসতে পারে।
- বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন বা নদী ও পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করুন।
- নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ যারা আছেন তাদের জন্য সবার আগে ত্রাণের ব্যবস্থা করুন।
- এ সময় ফসলি জমির অনেক ক্ষতি হয় তাই অতি দ্রুত ফসলি জমি পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করুন।
লেখকের মন্তব্য
বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় দেশটির অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রতিনিয়ত উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে হুমকির মধ্যে রাখে। তবে, উন্নত পূর্বাভাস বাবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমান সম্ভব হবে। আজকের এই পোস্টটি আপনাদের ভাল লেগে থাকলে আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করুন এবং কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url